রাতকানা রোগের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার?রাতকানা রোগের একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ

 রাতকানা রোগের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার ,রাতকানা বা নাইট ব্লাইন্ডনেস এমন এক রোগ যা মানুষের রাতের দৃষ্টিশক্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ,এর ফলে স্বল্প আলোতে বা রাতের বেলায় চোখ মানিয়ে নিতে পারে না। 
রাতকানা-রোগের-কারণ-লক্ষণ-ও-প্রতিকার
এ রোগের মূল কারণ সাধারণত ভিটামিন এ এর ঘাটতে হলেও অন্যান্য চক্ষু রোগ জেনেটিক সমস্যা এবং রেটিনার ক্ষতি ও বড় ভূমিকা রাখে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে এ রোগের প্রকোপ বেশি। সময়মতো চিকিৎসা না করলে এটি স্থায়ী অন্ধত্বের দিকে নিয়ে যেতে পারে, তাই রাতকানা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী।

সূচিপত্রঃরাতকানা রোগের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার? রাতকানা রোগের একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ

রাতকানা রোগের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার

রাতকানা হলো এমন এক চক্ষু সমস্যা যেখানে রাতের বেলায় বা অন্ধকারে স্পষ্ট ভাবে দেখা যায় না। আক্রান্ত ব্যক্তি দিনের বেলায় স্বাভাবিকভাবে দেখতে পারেন, কিন্তু আলো কমে গেলে দৃষ্টিশক্তি কমে যায়।  বাহিরে চলাফেরা করতে, বা সাধারণ কাজ করতে ভয় পান ,তাই এর সঠিক পরিচিতি জানা জরুরী। চলুন জেনে আসি  এই আর্টিকেলে আমরা রাতকানা রোগের কারণ লক্ষণ প্রতিকার এবং প্রতিরোধ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

ভিটামিন-এ ঘাটতি গুরুতর প্রভাব

ভিটামিন এ চোখের স্বাভাবিক কার্যক্রমের জন্য অপরিহার্য এটি কর্নিয়াকে সুস্থ রাখে এবং দৃষ্টিশক্তি রক্ষায় সাহায্য করে। ভিটামিন এ এর ঘাটতি হলে প্রথমেই রাতকানার সমস্যা শুরু হয়, দীর্ঘদিন ঘাটতি থাকলে কর্নিয়া শুকিয়ে যেতে পারে ,এবং শেষ পর্যন্ত স্থায়ী অন্ধত্বের ঝুঁকি তৈরি হয়। শিশুদের জন্য এটি আরো বিপদজনক কারণ তারা দ্রুত অপুষ্টিতে ভোগে, প্রায় প্রতিদিনের খাবার তালিকায় গাজর, শাকসবজি, দুধ ,ডিম, মাছ ইত্যাদি খাবার অন্তভুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি। 
রাতকানা রোগের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার সুস্থ চোখে আলোকিত জীবন রাতকানা রোগ একটি প্রতিরোধ যোগ্য, ও নিয়ন্ত্রণ যোগ্য ,চক্ষু সমস্যা ভিটামিন এ সমৃদ্ধ সুষম খাদ্য নিয়মিত চোখের পরীক্ষা এবং সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে রোগকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। জনসচেনতা বৃদ্ধি, বিশেষ করে শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের ভিটামিন এ সম্পূরক গ্রহণ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরী।সুস্থ চোখ আমাদের জীবনে আলো সৌন্দর্য ও নিরাপত্তা নিয়ে আসে, তাই সময়মত সচেতন হই স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করি এবং রাতকানা রোগ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখি।

রাতকানা রোগের ঐতিহাসিক পটভূমি

রাতকানা রোগ প্রাচীনকাল থেকে মানুষের কাছে পরিচিত একটি সমস্যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে দেখা যায় চিকিৎসক হিপোক্রেটিস চোখের সমস্যায় ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবারের গুরুত্ব তুলে ধরেছিলেন। মধ্যযুগে মানুষ ধারণা করত এটি শাস্তি বা অভিশাপের ফল তবে আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে বোঝা যায় রাতকানা আসলে একটি চিকিৎসা যোগ্য রোগ। বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এটি একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়। ভিটামিন এ ঘাটতির ফলে বহু শিশু অন্ধত্বের ঝুঁকিতে থাকে ঐতিহাসিকভাবে রাতকানা জনসাস্থ্যের একটি চ্যালেঞ্জ ছিল আর কখনো তাই বয়ে গেছে।

খাদ্যাভ্যাস ও রাতকানা রোগের সম্পর্ক

খাদ্যাভ্যাস রাতকানা রোগের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত, যারা সুষম খাদ্য গ্রহণ করেন না, বিশেষত ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার তারা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন দুধ,ডিম,মাছ ,গাজর ,মিষ্টি আলু ,পাতা জাতীয় শাক, প্রভৃতি নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখলে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়। তবে অনেক পরিবার আর্থিক কারণে বা অজ্ঞতা কারণে এসব খাবার খেতে পারেন না,ফলে তাদের শরীরে ভিটামিন এ এর ঘাটতি তৈরি হয়, খাদ্যাভ্যাস উন্নয়ন করলে রাতকানা রোগ অধিকাংশই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব ।রাতকানা রোগের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার তাই সুস্থ চোখ রাখতে আমাদের খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর খাবার যোগ করা অত্যন্ত জরুরী।

শিশুদের মধ্যে রাতকানার প্রকোপ

শিশুরা রাতকানা রোগে বেশি আক্রান্ত হয় কারণ তাদের দেহে ভিটামিন এ এর প্রয়োজনীয়তা তুলনামূলক বেশি ,জন্মের পর থেকে সঠিক পুষ্টি না পেলে শিশুরা দ্রুত ঝুঁকিতে পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে উন্নয়নশীল দেশের অনেক কিছুই ভিটামিন এ এর অভাবে দৃষ্টিশক্তি হারাচ্ছে। অনেক সময় শিশুদের রাতকানা লক্ষণ প্রথমে ধরা পড়ে না, কারণ তারা রাতের সময় বাহিরের কম বের হয়। তবে তারা ঘরের ভেতর অন্ধকারে পড়ে গিয়ে আঘাত পেতে পারে তাই শিশুদের হাত দেখাস এর ভিটামিন এ সম্পূরক গ্রহণ নিশ্চিত করা অপরিহার্য।

রাতকানা রোগে গ্রামীণ জনজীবনের প্রভাব

গ্রামীন এলাকায় রাতকানা রোগ বেশি দেখা যায় কারণ সেখানে স্বাস্থ্য সেবা ও পুষ্টির অভাব রয়েছে। কৃষক পরিবার গুলো প্রায় পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার সুযোগ পায় না, তারা শস্য উৎপাদন করলেও নিজেদের খাদ্য তালিকায় বৈচিত্র্য রাখে না। ফলে ভিটামিন এ এর ঘাটতি দেখা দেয়, রাতে আলো কম থাকার কারণে রাতকানায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা কাজ করতে পারে না, বিশেষ করে নারীরা ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি কষ্ট ভোগ করে। রাতকানা শুধু স্বাস্থ্য সমস্যা নয় এটি গ্রামীন জীবনের উৎপাদনশীলতা ও নিরাপত্তার ওপরও প্রভাব ফেলে।

রাতকানা রোগের মানসিক প্রভাব

দৃষ্টিশক্তির সমস্যা শুধু শারীরিক অসুবিধা তৈরি করে না, মানসিক সমস্যা ও সৃষ্টি করে রাতকানা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। রাতে বাহিরে যেতে ভয় পান, দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে, দীর্ঘদিন এই সমস্যা চলতে থাকলে হতাশা, বিষন্নতা এবং একাকীত্ব দেখা দেয়। শিশুরা স্কুলে সমস্যায় পড়তে পারে কারণ তারা বোর্ড পরিষ্কার ভাবে দেখতে পায় না, তাই মানসিক সুস্থতার জন্য রাতকানা রোগের সময়মতো চিকিৎসা খুবই জরুরী। 

চিকিৎসা বিজ্ঞানে আধুনিক অগ্রগতি

চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে রাতকানা রোগের চিকিৎসা অনেক সহজ হয়েছে। ভিটামিন এ সাপ্লিমেন্ট এখন সহজলভ্য বিভিন্ন দেশের সরকার বিনামূল্যে ভিটামিন এ ক্যাপসুল বিতরণ করে থাকে। এছাড়া আধুনিক চক্ষু পরীক্ষা এবং ডায়াগনস্টিক প্রযুক্তির মাধ্যমে রোগটি দ্রুত শনাক্ত করা যায়, লেজার চিকিৎসা এবং সার্জারি অনেক জটিল ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। রাতকানা রোগের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার এছাড়া সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের প্রচেষ্টা চলছে তাই আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা সঠিক ব্যবহার রাত করার নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
রাতকানা-রোগের-কারণ-লক্ষণ-ও-প্রতিকার

রাতকানা প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি

রাতকানা প্রতিরোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো জনসচেতনতা, অনেক মানুষ জানেই না যে রাতকানা ভিটামিন এর ঘাটতির কারণে হয়। স্কুল কমিউনিটি সেন্টার ,স্বাস্থ্য কেন্দ্র ,এবং গণমাধ্যমের মাধ্যমে, সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। গ্রামীন এলাকায় বিশেষ করে নারীদের পুষ্টি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরী ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবারের তালিকায় জনগণের কাছে সহজ ভাবে পৌঁছে দিতে হবে। শুধু চিকিৎসা নয় ,সচেতনতার মাধ্যমেই রাতকানা রোগের বিস্তার রোধ করা সম্ভব।

সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব

রাতকানা রোগ শুধু ব্যক্তিগত সমস্যা নয় এটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলে, কর্মক্ষম মানুষ যদি রাতে কাজ করতে না পারেন তবে তাদের আয় কমে যায়, পরিবারের ওপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি হয়, শিশুরা পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ে। দীর্ঘ মেয়াদে এটি সমাজের উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয় রাতকানা রোগের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার সরকারকেও অন্ধত্ব প্রতিরোধে চিকিৎসা খাতে  বাড়তি ব্যয় বহন করতে হয়। তাই রাতকানা রোগ প্রতিরোধ শুধু স্বাস্থ্যগত নয় অর্থনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।

গর্ভবতী মায়েদের জন্য বিশেষ নির্দেশনা

গর্ভাবস্থায় ভিটামিন এ এর ঘাটতি মা ও শিশুর উভয়ে জন্য বিপদজনক মায়ের শরীরে ভিটামিন এ কম থাকলে শিশুর চোখের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এজন্য গর্ভবতী নারীদের সুষম খাদ্য গ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরী দুধ, ডিম ,মাছ ,শাক সবজি, ও ফল তাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় থাকা উচিত রাতকানা রোগের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার। অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয় ,এই ব্যবস্থা মায়ের স্বাস্থ্যে ও শিশুর সুস্থ দৃষ্টি দুটোই নিশ্চিত করা।

জেনেটিক কারণ ও বংশগত প্রভাব

রাতকানা কখনো কখনো বংশগত কারণেও হতে পারে, যদি পরিবারের কারো এই রোগ থাকে তবে পরবর্তী প্রজন্মের ঝুঁকি বেড়ে যায় অনেক সময় জেনেটিক রেটিনাল ডিজিজের কারণে শিশুর জন্ম থেকেই রাতকানা রোগে ভোগে। রাতকানা রোগের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার এর সঠিক চিকিৎসা জটিল হলেও প্রাথমিক অবস্থায় সনাক্ত করলে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব ,তাই পরিবারের রাতকানার ইতিহাস থাকলেও শিশুদের চোখে নিয়মিত পরীক্ষা জরুরী।

চোখের রোগ ও রেটিনার ক্ষতি

রেটিনার বিভিন্ন সমস্যা রাতকানা সৃষ্টি করতে পারে যেমন রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা, গ্লুকোমা বা ক্যাটারাক্ট । এসব রোগে চোখের আলো গ্রহণকারী সেল ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফলেকম আলোতে চোখ মানিয়ে নিতে পারেনা। চোখের আঘাত বা সংক্রমণ ও এর কারণ হতে পারে তাই রাতকানা কে হালকা করে দেখা উচিত নয় ,চোখের যে কোন সমস্যায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য। নিম্নে চোখের রোগ ও রেটিনার ক্ষতি গুলো উল্লেখ করা হলোঃ
চোখের রোগ এবং রাতকানাঃ
  • রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসাঃ এটি একটি জিনগত রোগ যা রেটিনার কোষের ক্ষতি করে, এ রোগের রাতকানা প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয় এবং ধীরে ধীরে দৃষ্টিক্ষেত্র সংকুচিত হয়।
  • গ্লকোমাঃ চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ বৃদ্ধির কারণে রেটিনা এবং অপটিক নার্ভের ক্ষতি হতে পারে যা রাতকানার কারন হতে পারে।
  • ছানিঃ লেন্সের অস্বচ্ছতার কারণে আলোর রেটিনায় সঠিকভাবে পৌঁছাতে পারেনা যা রাতকানার সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  • ম্যাকুলার ডিজেনারেশনঃ এটি রেটিনার কেন্দ্রীয় অংশের ম্যাকুলা ক্ষতির কারণে ঘটে যা কম আলোতে দৃষ্টির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  • ভিটামিন এ এর ঘাটতিঃ ভিটামিন এ রেটিনার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এর ঘাটতি রাতকানার  অন্যতম কারণ।
  • রেটিনার ক্ষতি কারণ ও প্রভাবঃ
     রেটিনা হলে চোখের পেছনের একটি পাতলা স্তর যা আলোকে ধরে এবং মস্তিষ্কের দৃষ্টি সংকেত পাঠায়, রেটিনার প্রতি রাতকানা সহ বিভিন্ন দৃষ্টি সমস্যার কারণ হতে পারে নিম্নের রেটিনার ক্ষতির কিছু প্রধান কারণ উল্লেখ করা হলো।
  • জিনগত রোগঃ রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসার মত জিনগত রোগ রেটিনার কোষ ধীরে ধীরে ধ্বংস করে।
  • বয়সজনিত ক্ষতিঃ বয়স বাড়ার সাথে সাথে রেটিনার কোষ দুর্বল হতে পারে, যা ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের মত সমস্যার কারণ হয়।
  • ডায়াবেটিসঃ ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি রেটিনার রক্তনালী গুলোর ক্ষতি করে, যার রাতকানা এবং দৃষ্টিশক্তির হ্রাসের কারণ হতে পারে।
  • আঘাতঃ চোখে আঘাত বা ট্রমার ফলে রেটিনা ছিড়ে যেতে বা বিচ্ছিন্ন হতে পারে।
  • পুষ্টির ঘাটতিঃ ভিটামিন এ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির ঘাটতি রেটিনার স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে।
রেটিনার ক্ষতির প্রভাব দৃষ্টিশক্তির আংশিক ভাব সম্পন্ন ক্ষতি থেকে শুরু করে রঙের পার্থক্য করতে অক্ষমতা পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে এটি জীবনযাত্রার মানের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে এবং দৈনিক কাজকর্মে বাধা সৃষ্টি করে।
রেটিনার ক্ষতি প্রতিরোধ ও চিকিৎসাঃ
রাতকানা এবং রেটিনার প্রতি প্রতিরোধে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে এর মধ্যে রয়েছে।
  • নিয়মিত চোখের পরীক্ষাঃ নিয়মিত চোখের পরীক্ষার মাধ্যমে রাতকানা বা রেটিনার সমস্যা প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা সম্ভব।
  • পুষ্টিকর খাবারঃ ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার যেমন গাজর, পালং শাক, মিষ্টি আলু ইত্যাদি খাবার রেটিনা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
  • চোখের সুরক্ষাঃ উজ্জ্বল আলো বা ক্ষতিকর রশ্মি থেকে চোখ রক্ষার জন্য সানগ্লাস ব্যবহার করা।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে  শর্করার মাত্রার নিয়ন্ত্রণ করা রেটিনোপ্যাথি প্রতিরোধে সহায়ক।
  • চিকিৎসাঃ রাতকানার কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ যেমন ভিটামিন এ সাপ্লিমেন্ট সানি  অপসারণ সার্জারি বা রেটিনার জন্য লেজার চিকিৎসা।

প্রাথমিক লক্ষণ ও সতর্কবার্তা

রাতকানার  প্রাথমিক লক্ষণ হল অন্ধকারের দৃষ্টি অপষ্ট হওয়া, আক্রান্ত ব্যক্তিরা আলো থেকে অন্ধকারে গেলে চোখ মানিয়ে নিতে সময় নেয় রাতে হাঁটাচলা বা গাড়ি চালাতে অসুবিধা হয়। শিশুদের মধ্যে প্রায়ই হোঁচট খাওয়া পড়ে যাওয়া বা অন্ধকারে ভয় পাওয়া দেখা যায় এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। নিম্নে রাত কানার প্রাথমিক লক্ষণ ও সতর্কবার্তা গুলো উল্লেখ করা হলোঃ
রাতকানা রোগের প্রাথমিক লক্ষণঃ
  1. কম আলোতে দৃষ্টির সমস্যাঃ রাতকানা রোগের সবচেয়ে সুন্দর লক্ষণ হলো কম আলোতে বা সন্ধ্যায় সময় বৃষ্টির সমস্যা উদাহরণস্বরূপ, রোগীরা রাতে গাড়ি চালানোর সময় রাস্তার চিহ্ন বা বস্তু পরিষ্কারভাবে দেখতে অসুবিধা বোধ করেন।
  2. আলো থেকে অন্ধকারে অভ্যস্ত হতে সময় লাগাঃ রাতকানাই আক্রান্ত ব্যক্তিরা উজ্জ্বল আলো থেকে কম আলোর পরিবেশে গেলে চোখের অভ্যস্ত হতে বেশি সময় লাগে যেমন একটি উজ্জ্বল ঘর থেকে অন্ধকার ঘরে প্রবেশ করলে দৃষ্টি অপষ্ট থাকে।
  3. ঝাপসা দৃষ্টিঃ কম আলোতে বস্তু ঝাপসা দেখা বা বিস্তারিত বিষয়  চিনতে অসুবিধা হয়।
  4. আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা ঃ কিছু ক্ষেত্রে রোগীরা উজ্জ্বল আলোর প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা অনুভব করতে পারেন, যা তাদের দৃষ্টিকে আরও জটিল করে তোলে।
  5. রঙের পার্থক্য করতে অসুবিধাঃ তমালতের রঙের পার্থক্য বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে।
রাতকানা রোগের সতর্কবার্তাঃ নিম্নে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা উল্লেখ করা হলো-
  1. দৃষ্টিশক্তির ক্রমান্বয়ে হ্রাসঃ যদি কম আলোতে দেখার সমস্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকে, তবে এটি রেটিনার খতিবা অন্য কোন চোখের রোগের ইঙ্গিত হতে পারে।
  2. চোখে ব্যথা বা অস্বস্তিঃ রাতকানার সাথে যদি চোখে ব্যথা, জ্বালাপোড়া বা অস্বস্তি অনুভব, হয় তবে এটি  গ্লকোমা বা অন্যান্য চোখের রোগের লক্ষণ হতে পারে।
  3. দৃষ্টিক্ষেত্রের সংকোচনঃ কিছু ক্ষেত্রে রোগীরা তাদের দৃষ্টি ক্ষেত্রের প্রান্তে দেখতে অসুবিধা বোধ করেন ,যা রেটিনার ক্ষতি বা রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসার মতো রোগের লক্ষণ হতে পারে।
  4. অন্যান্য শারীরিক লক্ষণঃ রাতকানা যদি ভিটামিন এ এর ঘাটতির কারনে হয়, তবে ত্বকের শুষ্কতা, ঘন ঘন সংক্রমণ বা দুর্বলতার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
  5. পারিবারিক ইতিহাসঃ যদি পরিবারের রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা বা অন্য কোন জিনগত চোখের রোগের ইতিহাস থাকে, তবে রাতকানার লক্ষণগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত।
রাতকানা-রোগের-কারণ-লক্ষণ-ও-প্রতিকার

রোগ নির্ণয়ের আধুনিক পরীক্ষার গুরুত্ব

চিকিৎসকরা রাতকানা নির্ণয়ে নানা ধরনের পরীক্ষা ব্যবহার করেন ভিশন টেস্ট রেটিনার পরীক্ষা এবং রক্ত পরীক্ষা সাধারণত সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় উক্ত প্রযুক্তি যেমন Optical Coherence Tomography OCT বা Electroretinogram ERG পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় আরও সহজ হয়েছে প্রাথমিক পর্যায়ের রোগ সনাক্ত হলে চিকিৎসা অনেক বেশি কার্যকর হয়।

উপসংহার

রাতকানা প্রতিরোধে বহুমুখী উদ্যোগ নেওয়া দরকার সরকার স্বাস্থ্যকর্মী ও সাধারণ জনগণ সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। শিশুদের জন্য ভিটামিন এ সাপ্লিমেন্ট বিতরণ চালিয়ে যেতে হবে, জনগণের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন আনতে হবে চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের পরামর্শ সহজলভ্য করতে হবে। ভবিষ্যতে প্রযুক্তির উন্নতির মাধ্যমে আরো কার্যকর চিকিৎসা বের হবে ,তবে মূল করণীয় হলো  সচেতনতা সুষম খাদ্য এবং সময়মতো চিকিৎসা। সুস্থ চোখ আমাদের জীবনকে আলোকিত করে তোলে তাই রাতকানা প্রতিরোধে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী।
সুস্থ চোখে আলোকিত জীবন রাতকানা রোগ প্রতিরোধ যোগ্য এবং নিয়ন্ত্রণযোগ্য সচেতনতা সুষম খাদ্য ও আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে এর রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। শিশুদের সুস্থ দৃষ্টি নিশ্চিত করতে হলে গর্ভাবস্থায় থেকেই মায়েদের পুষ্টির দিকে নজর দিতে হবে, মনে রাখতে হবে সুস্থ চোখ আমাদের জীবনের আলো তাই সবাইকে একসাথে এগিয়ে আসতে হবে রাতকানা প্রতিরোধে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনার মূল্যবান মতামত এখানে টাইপ করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url