শীতে শিশুদের নিউমোনিয়ার লক্ষণ ও প্রতিকার- কিভাবে বুঝবেন নিউমোনিয়া
শীতে শিশুদের নিউমোনিয়ার লক্ষণ ও প্রতিকার শীতকাল আসলেই ছোট্ট শিশুদের জন্য
সবচেয়ে বড় ভয় হল নিউমোনিয়া। ঠান্ডা আবহাওয়ার জন্য শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
কমে যায়, আর তখনই সুযোগ নেয় এই নীরব ঘাতক।
অনেক সময় সাধারণ সর্দি কাশি ভেবে
অবহেলা করলে তা পরিণত হয় বিপদে। তাই সময় মত লক্ষণ চিনে ব্যবস্থা নেওয়াই শিশু
নিরাপত্তার প্রথম ধাপ। সচেতন অভিভাবক হলেই নিউমোনিয়া ঠেকানো সম্ভব। আসুন
জেনে নেই শীতে শিশুর নিউমোনিয়ার লক্ষণ ও প্রতিকার।
সূচিপত্রঃ শীতে শিশুদের নিউমোনিয়ার লক্ষণ ও প্রতিকার
- শীতে শিশুদের নিউমোনিয়ার লক্ষণ ও প্রতিকার
- শিশুদের নিউমোনিয়া কী
- শিশুর নিউমোনিয়া প্রাথমিক লক্ষণ কি কি
- শিশুর নিউমোনিয়ার গুরুতর লক্ষণগুলো
- শিশুর কাশি ও শ্বাসকষ্টে নিউমোনিয়া কিভাবে চিনবেন
- জ্বর ছাড়াও নিউমোনিয়ার গোপন লক্ষণগুলো কী
- শিশুর নিউমোনিয়া হলে প্রথম করণীয় কি
- ডাক্তারের কাছে কখন নিয়ে যেতে হবে
- বাড়িতে শিশুর যত্ন কি করলে দ্রুত সেরে উঠবে
- শিশুকে নিউমোনিয়া থেকে বাঁচাতে করণীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা
- টিকা ভ্যাকসিন কি নিউমোনিয়া ঠেকাতে পারে
- উপসংহার মায়েদের জন্য পরামর্শ
শীতে শিশুদের নিউমোনিয়ার লক্ষণ ও প্রতিকার
শীতকাল আসলেই শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য এক অদৃশ্য যুদ্ধ শুরু হয়। এ সময়ে অনেক
ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সক্রিয় থাকে, আর সুযোগ পেলেই শিশুর ফুসফুসে আক্রমণ করে
নিউমোনিয়া তৈরি করে। অনেক অভিভাবক প্রথমদিকে এটিকে সাধারণ সর্দি কাশি ভেবে ভুল
করেন, আর এখানে ঘটে বিপদ।
নিউমোনিয়া মূলত ফুসফুসের সংক্রমণ, যেখানে শিশুর শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা
দেয়। শ্বাস নিতে কষ্ট, কাশি, বুক থেকে শব্দ হওয়া, দ্রুত শ্বাস নেওয়া, এগুলো
নিউমোনিয়ার বড় সংকেত। জ্বর থাকলেও পারে, আবার না থাকতেও পারে, তাই শুধু
তাপমাত্রা দেখে বোঝা যায় না।
অনেক সময় শিশু খেতে না চাওয়া, অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব, এসবও নিউমোনিয়ার গোপন
লক্ষণ হতে পারে। তাই শিশুর আচরণ বা শ্বাস নেওয়ার ধরনে হঠাৎ পরিবর্তন দেখলেই
সতর্ক হওয়া জরুরি।
প্রথম দিকে সঠিক ব্যবস্থা নিলে নিউমোনিয়া খুব সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু
দেরি হলে শিশুর অক্সিজেন লেভেল কমে যেতে পারে, এমনকি হাসপাতালে ভর্তি হতে পারে।
তাই সন্দেহ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া সব চেয়ে নিরাপদ উপায়।
শীতে শিশুকে ঠান্ডা বাতাস, ধুলাবালু, ও ভেজা পরিবেশ থেকে দূরে রাখা খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। ঘর যেন বাতাস চলাচলযোগ্য হয়, পরিষ্কার ও উষ্ণ থাকে, সেটা নিশ্চিত
করা দরকার। বাইরে গেলে গরম কাপড় পরানো, আর ফিরে এসে গরম পানি দিয়ে হাত মুখ
ধোয়ানো অভ্যাস করতে হবে।
শিশুকে শক্তি যোগাতে গরম স্যুপ, দুধ, ডিম, খিচুড়ি বা তরল খাবার দিতে পারেন। এতে
শরীরের ভেতর থেকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। পানি বা তরল খাবার বেশি দিলে শরীর
সংক্রমণ ঠেকাতে দ্রুত কাজ করতে পারে।
নিউমোনিয়া প্রতিরোধের টিকা খুবই কার্যকর। পিসিভি PCV ও Hib টিকা শিশুকে মারাত্মক
ফুসফুস সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে। তাই টিকা দেওয়া কখনোই এড়িয়ে যাওয়া উচিত
নয়।
সবশেষে সন্তানের যত্নে মা-বাবার সচেতনতায় সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। শিশু কাশি
দিচ্ছে, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, আচরণ বদলাচ্ছে, এসব কিছুই অবহেলা করবেন না।
সময়মতো চিকিৎসা, পুষ্টিকর খাবার আর সঠিক যত্নই পারে শীতে শিশুকে নিউমোনিয়া থেকে
নিরাপদ রাখতে।
শিশুদের নিউমোনিয়া কী
নিউমোনিয়া আসলে ফুসফুসে হওয়া একটি সংক্রমণ। আমাদের ফুসফুসের ছোট ছোট থলে থাকে,
যেগুলো বাতাস জমিয়ে শরীরে অক্সিজেন পাঠায়। যখন এই থলিগুলোতে পানি, পুজ বা
জীবাণু ভরে যায়, তখনই নিউমোনিয়া হয়।
এই রোগের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, বুক ভারী লাগে, আর শরীরে দুর্বলতা দেখা দেয়। কারণ
ফুসফুস ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না, আর তখনই
অবস্থাটা জটিল হতে শুরু করে।
শীতে শিশুদের নিউমোনিয়ার লক্ষণ ও প্রতিকার নিউমোনিয়া হতে পারে ভাইরাস,
ব্যাকটেরিয়া বা ফাংগাস এর কারণ। শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে এটি বেশি ভয়ংকর,
কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক কম থাকে।
অনেক সময় শুরুটা হয় সর্দি, কাশি বা জ্বর দিয়ে। তাই অনেকেই প্রথমে বুঝতেই পারেন
না যে ভেতরে নিউমোনিয়া তৈরি হচ্ছে। সময়মতো লক্ষণ না বুঝলে তা গুরুতর রূপ দিতে
পারে।
নিউমোনিয়ার শুধু শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা নয়, এটা পুরো শরীরকে দুর্বল করে ফেলে।
তাই এটাকে সাধারণ ঠান্ডা ভেবে অবহেলা করলে বড় বিপদ হতে পারে।সঠিক সময় চিকিৎসা
নিলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া পুরোপুরি সেরে যায়।
শিশুর নিউমোনিয়া প্রাথমিক লক্ষণ কি কি
- শিশুর নিউমোনিয়া প্রথম দিকে সাধারণ সর্দি কাশির মতোই দেখা দিতে পারে। তাই অনেক অভিভাবক বুঝতেই পারেনা যে ভেতরে একটা বড় সমস্যা শুরু হয়েছে।
- শিশু স্বাভাবিকের তুলনায় দ্রুত শ্বাস নিতে থাকে। যেন সে একটু দৌড়ে এসেছে, এটা নিউমোনিয়ার অন্যতম প্রধান লক্ষণ।
- বুকের ভেতর শ্বাস নেওয়ার সময় শব্দ হতে পারে,যাকে অনেকে হাঁপানো বা ঘড়ঘড়ে শব্দ বলে চেনে।
- শিশু হঠাৎ খেতে অনিহা দেখাতে পারে, দুধ বা খাবার নিতে চাইবে না। কারণ শরীরে দূর্বলতা বাড়তে থাকে।
- হালকা বা মাঝারি জ্বর থাকতে পারে। কিন্তু নিউমোনিয়ার সব সময় জ্বর না ও থাকতে পারে এটাই আসল ঝুঁকি।
- শিশু বারবার কাঁদতে পারে, অস্থির হতে পারে, বা ঘনঘন ঘুম ঘুম ভাব দেখাতে পারে, এসবই প্রাথমিক সতর্কবার্তা।
- অনেক সময় শিশুর শ্বাস নেওয়ার সময় বুক ভেতরের দিকে ঢুকে যায়, যাকে বলে চেস্ট ইনড্রয়িং। এটা হলে অবিলম্বে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
শিশুর নিউমোনিয়া গুরুতর লক্ষণগুলো
শিশুর নিউমোনিয়া যদি প্রাথমিক অবস্থায় ধরা না পড়ে, তবে তার দ্রুত জটিল আকার
নিতে পারে। এই সময় শিশুর শরীর অক্সিজেন ঠিকমতো পাই না, ফলে শ্বাসকষ্ট বাড়তে
থাকে। অনেক অভিভাবক তখন বুঝে ওঠার আগেই শিশুর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।
গুরুতর নিউমোনিয়ায় শিশুর শ্বাস নেওয়ার গতি খুব বেশি বেড়ে যায়। শ্বাস নিতে
গিয়ে বুক ভিতরের দিকে ঢুকে যায়, আর ঠোঁট বা নখ নীলচে হতে শুরু করে। এগুলো
একেবারে বিপদজনক লক্ষণ, দেরি না করে ডাক্তার দেখানো জরুরী।
শীতে শিশুদের নিউমোনিয়ার লক্ষণ ও প্রতিকার অনেক সময় শিশুর জ্বর কমে যায়,
কিন্তু অবস্থার অবনতি হয়, এটার মানে হলো শরীর এতটাই দুর্বল হয়ে গেছে যে জ্বর
দেখানোর মতো শক্তিও নেই। তাই জ্বর কম দেখেই নিশ্চিত হওয়া যাবে না।
শিশুর নিউমোনিয়ার গুরুতর লক্ষণঃ
- খুব দ্রুত শ্বাস নেওয়া বা দম নিতে কষ্ট হওয়া।
- শ্বাস নেওয়ার সময় বুক ভেতরের দিকে দেবে যাওয়া চেস্ট ইনড্রয়িং।
- ঠোট, নখ বা ত্বক নীলচে হয়ে যাওয়া।
- খেতে বা দুধ পান করতে একদম না চাওয়া।
- ঘনঘন বমি বা বমি ভাব।
- অতিরিক্ত ঘুম, অসচেতনভাব বা সাড়া কমে যাওয়া।
- হঠাৎ শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া বা তাপমাত্রা কমে যাওয়া।
- কাশি খুব বেশি বেড়ে যাওয়া বা শ্বাসে ঘড়ঘড়ে শব্দ হওয়া।
শিশুর কাশি ও শ্বাসকষ্টে নিউমোনিয়া কিভাবে চিনবেন
শিশুর কাশি অনেক সময় সাধারণ ঠান্ডা বা সর্দি কাশির মতো মনে হয়। তাই প্রথম ধাপ
হলো কাশির ধরন লক্ষ্য করা। নিউমোনিয়ার কাশি সাধারন কাশির চেয়ে বেশি স্থায়ী,
গভীর এবং ধীর নয়, বরং শিশুর শ্বাসকষ্টের সঙ্গে জড়িত।
শ্বাস নিতে কষ্ট হলে শিশুর বুক বা পেটে অস্বাভাবিক ঢেউয়ের মত উঠানামা দেখা যায়।
কখনো কখনো শিশুর নাক বা ঠোঁট নীলচে হয়ে যেতে পারে। এ ধরনের লক্ষণ দেখলে অবহেলা
করা উচিত নয়।
শিশু যদি খেলাধুলা বা চলাফেরার সময়ও দ্রুত শ্বাস নিতে থাকে, হঠাৎ থেমে যায় বা
চুপচাপ থাকে, এটা নিউমোনিয়ার বড় ইঙ্গিত। শিশুর স্বাভাবিক আচরণে হঠাৎ পরিবর্তন
সবসময় সতর্কবার্তা।
শীতে শিশুদের নিউমোনিয়ার লক্ষণ ও প্রতিকার শিশুর কাশির সঙ্গে অতিরিক্ত কাপুনি,
জ্বর, ঘাম বা দুর্বলতা যুক্ত থাকলে নিউমোনিয়া আরও সম্ভাব্য। এমন সময় দেরি না
করে ডাক্তার দেখানো জরুরী।
শিশু শ্বাসকষ্ট চিহ্নিত করার আরেকটি উপায় হল ধীরভাবে শ্বাস নেওয়া বা হাঁপানো,
শব্দের প্রতি লক্ষ্য রাখা। ঘন ঘন বা দীর্ঘসময় লক্ষণ থাকলে তা গুরুতর হতে পারে।
নিয়মিত শিশুর শ্বাস, কাশি মুখের রং এবং আচরণ পর্যবেক্ষণ করলে নিউমোনিয়ার
প্রাথমিক সনাক্তকরণ অনেক সহজ হয়। দ্রুত সঠিক ব্যবস্থা নিলে শিশুর সুরক্ষা
নিশ্চিত করা সম্ভব।
জ্বর ছাড়াও নিউমোনিয়ার গোপন লক্ষণ গুলো কি
নিউমোনিয়ার অনেক সময় শিশুর জ্বর ছাড়ায় শুরু হয়। এজন্য অনেক অভিভাবক প্রথম
দেখে বুঝতে পারেন না যে শিশুর ফুসফুসের সংক্রমণ হয়েছে। জ্বর না থাকলেও শরীরে
অন্য কিছু গোপন লক্ষ্য দেখা দিতে পারে।
শীতে শিশুদের নিউমোনিয়ার লক্ষণ ও প্রতিকার শিশুর আচরণে হঠাৎ পরিবর্তন হলে সতর্ক
হওয়া উচিত। ছোট্ট শিশু হঠাৎ দুর্বল বা অলস হয়ে যেতে পারে, খেলাধুলাই আগ্রহ
হারাতে পারে। এমন আচরণ প্রাথমিক সতর্কবার্তা।
শিশুর খাওয়া দাওয়াও হটাৎ সমস্যা দেখার দিতে পারে। দুধ বা খাবার নিতে অনিহা,
বারবার বমি বা খাবার হজমে সমস্যা, এসবই জ্বর ছাড়া নিউমোনিয়ার ইঙ্গিত হতে পারে।
শ্বাসকষ্ট ও কাশি কিছুটা হালকা হলেও ঘন ঘন ঘুম বা নিঃশ্বাসের অস্বাভাবিকতা দেখা
দিলে এটিকে ছোটখাটো ঘটনা ভাবার ভুল করা যাবে না।
জ্বর ছাড়াও নিউমোনিয়ার গোপন লক্ষণগুলোঃ
- হঠাৎ দুর্বল বা অলস হওয়া
- খেলাধুলায় আগ্রহ হারানো
- খাওয়া-দাওয়ায় অনীহা
- বারবার বমি বা হজমের সমস্যা
- ঘন ঘন ঘুমানো বা অচেতন ভাব
- শ্বাস নেওয়ার সময় হালকা অস্বাভাবিকতা
- হঠাৎ কাঁপুনি বা শরীরের অস্বাভাবিক আচরণ
শিশুর নিউমোনিয়া হলে প্রথম করণীয় কি
শিশুর নিউমোনিয়া ধরা পড়লে প্রথম কাজ হল শান্ত থাকা। প্যানিক করলে শিশুর অবস্থা
আরো খারাপ হতে পারে। সচেতন ভাবে ধাপে ধাপে ব্যবস্থা নেওয়াই সবচেয়ে গুরুত্ব
পূর্ণ।
প্রথমে শিশুর শ্বাসকষ্ট বা কাশির লক্ষণ গুলো মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করুন। শ্বাস
নিতে কষ্ট হলে তাকে বসানো বা হালকা উত্তোলন করে রাখা সুবিধার জনক। শিশুকে ঘরে
উষ্ণ এবং ধুলোবালি মুক্ত পরিবেশে রাখুন।
যদি জ্বর বা শ্বাসকষ্ট গুরুতর হয়, অবিলম্বে ডাক্তার বা হাসপাতালের সাথে যোগাযোগ
করুন। ঘরোয়া ওষুধ দিয়ে নিজে চেষ্টা করার আগে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত
জরুরী।
শিশুকে পর্যাপ্ত তরল বা খাবার দিতে চেষ্টা করুন। গরম দুধ,স্যুপ বা হালকা পুষ্টিকর
খাবার শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে সংক্রমণ মোকাবেলা করতে সাহায্য করে।
শিশুর ত্বক, ঠোট এবং নখের রং নিয়মিত পরীক্ষা করুন। যদি নীলচে বা ফ্যাকাশে
দেখায়, তা গুরুতর সংকেত ডাক্তারের কাছে দ্রুত পৌঁছানো আবশ্যক।
শিশুর কাশি বা শ্বাসকষ্ট নিয়মিত নোট করুন এবং ডাক্তারের কাছে বিস্তারিত তথ্য
দিন। এটি চিকিৎসাকে আরো কার্যকর করে তোলে।
ডাক্তারের কাছে কখন নিয়ে যেতে হবে
শিশুর কাশি বা সর্দি অনেক সময় স্বাভাবিক মনে হলেও কিছু লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না
করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়াই safest পদ্ধতি।প্রথমে লক্ষ্য রাখুন শিশুর শ্বাস
নেওয়ার ধরন,ত্বক ও ঠোঁটের রঙ,খাওয়া দাওয়া ও আচরণ।
যদি শিশুর শ্বাস দ্রুত বা অস্বাভাবিক হয়, বুক ভেতরের দিকে ঢুকে যায়, অথবা ঠোঁট
ও নখ নীলচে হয়ে যায় এ সময় অবিলম্বে ডাক্তার দেখানো জরুরী। এগুলো নিউমোনিয়ার
গুরুতর লক্ষণ।
শীতে শিশুদের নিউমোনিয়ার লক্ষণ ও প্রতিকার শিশু দীর্ঘ সময় ধরে থাকে, বারবার বমি
হয়, বা হঠাৎ দুর্বল ও অচেতন হয়ে যায় এক্ষেত্রে চিকিৎসা বিলম্ব করা বিপদজনক।
যদি শিশুর খাওয়া কমে যায়, দুধ বা খাবারের অনাহা দেখা দেয়, ঘনঘন ঘুম আসে
বা অস্বাভাবিক আচরণ দেখা যায় তাও নিমোনিয়ার ইঙ্গিত হতে পারে। এ ধরনের লক্ষণেও
ডাক্তার দেখানো উচিত।
শ্বাসকষ্ট, জ্বর বা কাশির সঙ্গে অতিরিক্ত কাঁপুনি, ঘাম বা অসুস্থতা দেখা
দিলে অবিলম্বে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত। দ্রুত চিকিৎসা শিশুকে গুরুতর
পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করতে পারে।
বাড়িতে শিশুর যত্ন কি করলে দ্রুত সেরে উঠবে
শিশু নিমোনিয়া হলে বাড়িতে সঠিক যত্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমে শিশুর ঘর উষ্ণ,
পরিষ্কার এবং ধুলোবালু মুক্ত রাখা দরকার। ঠান্ডা বাতাস, ভেজা কাপড় বা ধোঁয়া
থেকে শিশুকে দূরে রাখুন।
শিশুকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিন। যতটা সম্ভব খেলাধুলা বা বেশি সক্রিয় হওয়া থেকে
বিরত রাখুন। বিশ্রামে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াই
সহজ হয়।
শিশুর কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়মিত পরীক্ষা করুন। যদি শ্বাস নিতে সমস্যা হয়, শিশুকে
হালকা উঁচু করে বসানো সুবিধা জনক। এতে ফুসফুসে বাতাস সহজে চলে।
শিশুর তাপমাত্রা নিয়মিত মাপুন। হালকা জ্বর থাকলে ডাক্তার পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ
ব্যবহার করুন। নিজের ইচ্ছামত বড় ওষুধ দেওয়া ঠিক নয়।
শিশুর সঙ্গে বারবার যোগাযোগ রাখুন। ভালোভাবে দেখে বুঝতে পারবেন তার আচরণে কোন
পরিবর্তন এসেছে কিনা। ছোটখাটো লক্ষণ ও সময়মতো সনাক্ত করা সহজ হবে।
শিশুর যত্নের পাশাপাশি পরিবেশের সর্তকতা ও জরুরী। ঘর আর্দ্র রাখলে ফুসফুসে
সংক্রমণ কম থাকে। উষ্ণ পানি দিয়ে হালকা স্যােয়াবিং বা গরম কাপুর শিশুকে আরাম
দেয়।
শীতে শিশুকে নিউমোনিয়া থেকে বাঁচাতে করণীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা
শিশুর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাবার দিন। পর্যাপ্ত দুধ,
সবজি, ফল এবং হালকা খাবার শিশু শরীরকে শক্তিশালী রাখে। এছাড়া পর্যাপ্ত পানি বা
তরল খাবার শরীরের ভেতরের সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
শিশুর ঘুম ও বিশ্রাম এর দিকে খেয়াল রাখুন। পর্যাপ্ত বিশ্রামে শিশুর শরীর শক্তি
সঞ্চয় করে এবং সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম হয়। অত্যধিক খেলাধুলা বা
সক্রিয়তা সংক্রমণকে বাড়াতে পারে।
টিকা বা ভ্যাকসিন শিশুকে নিউমোনিয়া প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর সুরক্ষা দেয়।
pcv hib বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন শিশুকে মারাত্মক ফুসফুস সংক্রমণ
থেকে রক্ষা করতে পারে।
শিশুকে ঠান্ডা পরিবেশে বাহিরে নিয়ে যাওয়া হলে উষ্ণ কাপড় পরান, হাত মুখ ধোয়ানো
এবং গরম পানির ব্যবহারে সতর্ক থাকুন। ছোট ছোট অভ্যাস ও বড় সংক্রমণ প্রতিরোধে
সাহায্য করে।
মায়েদের অচেনা তার সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাস, কাশি, আচরণ এবং
খাওয়া-দাওয়ার প্রতি নজর রাখলে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়। সচেতনতা,
পরিচর্যা ও টিকা এ তিনটি মিশ্রণই শিশুকে শীতে নিরাপদ রাখে।
টিকা ভ্যাকসিন কি নিউমোনিয়া ঠেকাতে পারে
নিউমোনিয়া প্রতিরোধের টিকা বা ভ্যাকসিন একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। শিশুর
ফুসফুসের সংক্রমণ অনেক সময় ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়, আর এই ব্যাকটেরিয়া থেকে
রক্ষা করতে টিকা কার্যকর।
পিসিভি, এইচআইবি, টিকা শিশুকে মারাত্মক ফুসফুস সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে। এই
টিকার সময় মত নেওয়া হলে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
ভ্যাকসিন শুধু ফুসফুস সংক্রমণই নয়, শিশুদের সাধারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও
সাহায্য করে। ফলে শিশুর শীতের সহজে সর্দি কাশি বা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়
না।
কিছু ভেকসিন একাধিক রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। তাই শিশুর পূর্ণ ভ্যাকসিন
সিডিউল অনুসরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অভিভাবক সচেতন থাকলে টিকা শিশুদের জীবন
রক্ষা করতে পারে।
শিশুকে টিকা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য যত্ন যেমন উষ্ণ পরিবেশ, পুষ্টিকর খাবার
ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম অপরিহার্য। এই মিলিত প্রচেষ্টা শিশুকে শীতের স্বাস্থ্যবান
রাখে।
উপসংহার মায়েদের জন্য পরামর্শ
শিশু নিমোনিয়া হলে বাড়িতে সঠিক যত্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমে শিশুর ঘর উষ্ণ,
পরিষ্কার এবং ধুলোবালু মুক্ত রাখা দরকার। ঠান্ডা বাতাস, ভেজা কাপড় বা ধোঁয়া
থেকে শিশুকে দূরে রাখুন।
পিসিভি, এইচআইবি, টিকা শিশুকে মারাত্মক ফুসফুস সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে। এই
টিকার সময় মত নেওয়া হলে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
শীতকালের শিশুর নিউমোনিয়া একটি গুরুতর কিন্তু প্রতিরোধ যোগ্য সমস্যা। সচেনতা,
সঠিক যত্ন, পুষ্টিকর খাবার, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, এবং সময় মতো টিকা এসব মিলে শিশুকে
সুস্থ ও নিরাপদ রাখে। মায়েদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া
শিশুদের ফুসফুস কে সুস্থ রাখার মূল চাবিকাঠি। নিরাপদ ও সঠিক যত্নই শীতে শিশুকে
নিউমোনিয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।



আপনার মূল্যবান মতামত এখানে টাইপ করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url